-->

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা,তড়িৎ চুম্বকীয় বর্ণালি সম্পর্কে আমরা সবাই জানি।এগুলোর ব্যবহারও কি জানি?এগুলোর ব্যবহার সম্পর্কেও জানা জরুরি।কারণ ব্যবহার থেকে যেমন প্রশ্ন আসে,ঠিক তেমনি এগুলো লিখতে পারলে নম্বর বেশি পাওয়া যায়।তো চলো তড়িৎ চুম্বকীয় বর্ণালি সম্পর্কে একটু জেনে এদের ব্যবহার আলোচনা করিঃ

তড়িৎ চুম্বকীয় বিকিরণ রশ্মিসমূহকে এদের তরঙ্গদৈর্ঘ্য  তথা ফ্রিক্যুয়েন্সি বা কম্পাঙ্ক সংখ্যার ভিত্তি তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ক্রমবৃদ্ধি অনুসারে নিম্নোক্ত প্রধান সাতটি অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়।  (১) গামা রশ্মি অঞ্চল, (২) রঞ্জন রশ্মি (X-ray) অঞ্চল, (৩) অতিবেগুনি রশ্মি (UV) অঞ্চল, (৪) দৃশ্যমন (Visible) অঞ্চল, (৫) অবলোহিত (IR) অঞ্চল, (৬) মাইক্রোওয়েভস্ (Micro waves) অঞ্চল, (৭) রেডিও(Radio waves) অঞ্চল ।

 আরো দেখুন: অবস্থান্তর মৌলের ধর্ম আলোচনা

(১) গামা  রশ্মি অঞ্চল :
গামা রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য 0.0005 - 0.01nm পর্যন্ত বিস্তৃত। এ অঞ্চলের তরঙ্গদৈর্ঘ্য খুবই ক্ষুদ্র হওয়ায় এ তরঙ্গ অধিক শক্তিসম্পন্ন থাকে। তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ থেকে গামা রশ্মি বের হয়। এ রশ্মি মসবাওয়ার বর্ণালিমিতিক (Mossbaer Spectroscopy) যন্ত্র এবং নিউট্রন সক্রিয়ণ বিশ্লেষণ (Neutron Activation Analysis প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়।
(২) রঞ্জন রশ্মি (X-ray) অঞ্চল :
রঞ্জন রশ্মি বা এক্স-রে তরঙ্গদৈর্ঘ্য 0.01 nm - 10 nm পরিসরে থাকে। এক্স-রে  ফ্লোরেসেন্স (X-ray Fluorescence) বা প্রতিপ্রভা বিশ্লেষণী, এক্সরে নিঃসরণ (X-ray Emission) বিশ্লেষণী ও এক্সরে ক্রিস্টেলোগ্রাফি (X-ray Crystallography) পদ্ধতিতে রঞ্জন রশ্মি ব্যবহৃত হয়।
(৩) অতিবেগুনি রশ্মি (UV) অঞ্চল :
এ অঞ্চলটি 10nm - 380nm তরঙ্গদৈর্ঘ্য পর্যন্ত বিস্তৃত। এর বিভিন্ন তরঙ্গ পরিসর নিম্নোক্ত কাজে ব্যবহৃত হয়।
(i) 30 nm - 200 nm তরঙ্গদৈর্ঘ্য: UV-ফটোইলেকট্রন স্পেকট্রোস্কোপি।
(ii) 230 nm - 365 nm তরঙ্গদৈর্ঘ্য : UV-ID, লেবেল ট্র্যাকিংরূপে।
(iii) 230nm -380nm তরঙ্গদৈর্ঘ্য: অপটিকেল সেন্সররূপে।
(iv) 240 nm – 280 nm তরঙ্গদৈর্ঘ্য : জীবাণুনাশন কাজে।
(v) 200 nm – 400 nm তরঙ্গদৈর্ঘ্য: ড্রাগ (drug) শনাক্তকরণে।
(vi) 270nm – 360nm তরঙ্গদৈর্ঘ্য: প্রোটিন অ্যানালাইসিস কাজে।
(vii) 280 nm – 400 nm তরঙ্গদৈর্ঘ্য : কোষ বা cell এর মেডিকেল ইমেজিং।
(viii) 300 nm 320 nm তরঙ্গদৈর্ঘ্য: চিকিৎসাক্ষেত্রে লাইট থেরাপি।
(৪) দৃশ্যমান (Visible) অঞ্চল :
এ অঞ্চলটি 380nm – 780nm পর্যন্ত বিস্তৃত। এ অঞ্চল VIBGYOR অঞ্চলরূপে চিহ্নিত। পরমাণু অথবা অণুর ক্ষেত্রে যোজ্যতা স্তরের ইলেকট্রন এ অঞ্চল থেকে প্রয়োজনমতো রশ্মি শোষণ ও বিকিরণ করে বর্ণালি সৃষ্টি করে থাকে।
(৫) অবলোহিত (Infra-red) অঞ্চল :
অবলোহিত রশ্মি অঞ্চল দৃশ্যমান অঞ্চল অর্থাৎ visible বা 'infra' পর থেকেই শুরু। এর পরিসর 780 nm থেকে 1.0mm। অর্থাৎ এটি near IR, middle-IR,Far-IR এরূপ তিনটি অংশে বিভক্ত। এদেরকে মাইক্রোমিটার  এককে প্রকাশ করা হয়। জৈবযৌগের গঠন নির্ণয়ে এ রশ্মি ব্যবহৃত হয়।
Near-IR অঞ্চল:চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
middle-IR অঞ্চল : জৈব যৌগের কার্যকরীমূলক শনাক্তকরণে  এবং Spectroscopy তে ব্যবহৃত হয়।
Far-IR অঞ্চল:চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
(৬)মাইক্রোওয়েভস্ (Micro waves) অঞ্চল :
এ অঞ্চলের রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য 1 mm - 1 m পর্যন্ত হয়। Wi-fi,মোবাইল ফোন সিগনাল ও মাইক্রোওভেনে ব্যবহৃত হয়।
(৭) রেডিও ওয়েভস (Radio waves) অঞ্চল:

এ অঞ্চলের রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য 1 mm - 10km পর্যন্ত হয়।রেডিও এন্টেনাতে উচ্চ কম্পাঙ্কের পর্যায়ক্রমিক বিদ্যুৎ (AC) প্রবাহ দ্বারা এখন তরঙ্গের সৃষ্টি করা হয়। NMR পরমাণু অর্থাৎ বিজোড় সংখ্যক প্রোটন অথবা নিউট্রনযুক্ত পরমাণুর নিউক্লিয়াসে ম্যাগনেটিক মোমেন্ট থাকে। এসব NMR পরমাণুযুক্ত যৌগকে শক্তিশালী চুম্বকক্ষেত্রের প্রভাবে রেখে রেডিও ওয়েভস প্রয়োগ করে MRI বা ম্যাগনেটিক অনুরণন ইমেজ পরীক্ষা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে।

আরও দেখুন: নিউক্লিয়ার ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স (NMR) ও ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (MRI)

এভাবেই EMR এর বিভিন্ন অঞ্চল গুলোকে বিভিন্ন ভাবে মানবসভ্যতার কল্যাণে ব্যবহার করা হচ্ছে।

-->