-->

নিউক্লিয়ার ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স (NMR) একটা প্রক্রিয়া বা মূলনীতি, যা ব্যবহার করে ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (MRI) প্রযুক্তি তৈরি করা হয়েছে।এবার একটু জেনে নেয়া যাক।

 পরমাণু উপস্থিত আছে এরূপ কোনো যৌগ বিশেষ করে পানি অণু বা কোনো জৈব যৌগকে শক্তিশালী কোনো ঠিক চৌম্বক ক্ষেত্রে স্থাপন করলে যৌগের অণুর প্রোটনগুলো শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে তার নিজস্ব স্পিনের গতি ছাড়াও নিউক্লিয়াসের বিপরীত স্পিন ধারণ করে ঘুরতে থাকে। এ ঘূর্ণন অবস্থায় যৌগের অণুর উপর দুর্বল রশ্মি প্রক্ষেপণ করা হলে প্রোটনগুলো শক্তি শোষণ করে যথেষ্টভাবে শক্তিশালী হয়। এ অবস্থায় বাইরের বড় ছাড়াও তাড়িত  চৌম্বক ক্ষেত্রের আকর্ষণ হতে নিজেকে বিমুক্ত করে এবং একই সাথে খুব দ্রুত নিজের স্পিন গতির দিক পরিবর্তন করে ফেলে ।

 এঅবস্থায় অধিক শক্তি সম্পন্ন প্রোটনগুলো শোষিত শক্তি বিকিরণ করে পুনরায় পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে। প্রোটনের শোষণ ও শক্তির বিকিরণের এ মধ্যবর্তী সময়কে স্বস্তিকাল (Relaxation time) বলা হয়। 


নিউক্লিয়ার ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজিং (MRI) পর্যবেক্ষণ যন্ত্রে একজন রোগীকে একটি বৃহৎ ও শক্তিশালী চুম্বক সৃষ্ট চুম্বকক্ষেত্রে রাখা হয়, যা শরীরের অভ্যন্তরীণ পরমাণু নিউক্লিয়াসসমূহের চৌম্বক আবেশকে সারিবদ্ধ করে এবং তরঙ্গীয় চৌম্বকক্ষেত্রের সাহায্যে এ চৌম্বক আবেশকে পালাক্রমে আবর্তিত করা হয়। ফলে নিউক্লিয়াসসমূহ টি আবর্তিত চৌম্বকক্ষেত্রের তথ্য পর্যবেক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে ধারণ করে দেহের পর্যবেক্ষণকৃত স্থানের চিত্ররূপে প্রকাশ একটি বেতার দেহের কোষসমূহে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে। মানুষের শরীরে পানির পরিমাণ প্রায় 70%। প্রতিটি পানির অণুতে দুটি করে হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াস বা প্রোটন আছে। কারণ প্রতিটি হাইড্রোজেন পরমাণুর নিউক্লিয়াসে একটি করে প্রোটন থাকে। কোনো নিউট্রন থাকে না।  পানির অণুর H পরমাণু MRI সৃষ্টিকারী পরমাণু। H-পরমাণুর নিউক্লিয়াসে T-ইলেকট্রনের ন্যায় ঘূর্ণন বৈশিষ্ট্য থাকে। H এর প্রোটন কণার ঘূর্ণন অক্ষ বরাবর চৌম্বকীয় মোমেন্ট সৃষ্টি করে। ফলে H-পরমাণুর নিউক্লিয়াস তথা প্রোটন ক্ষুদ্র ন্যায় আচরণ করে। বাহ্যিক চৌম্বক ক্ষেত্রে স্থাপন করলে এদের চৌম্বকীয় মোমেন্ট দুটি সম্ভাব্য অবস্থার সৃষ্টি করে। অবস্থা চুম্বক ক্ষেত্রে বরাবর বিন্যস্ত থাকে এবং এটি হলো কম শক্তিসম্পন্ন স্তর,  A-স্তর। অপরটি বহিঃস্থ চুম্বক ক্ষেত্রের বিপরীতে  উচ্চ শক্তিস্তর, B-স্তর হিসেবে অবস্থান করে। উভয় শক্তিস্তরের শক্তির পার্থক্য, AE = (B – a) = ho

 পানির H-পরমাণুর নিউক্লিয়াসে একটি অযুগ্ম প্রোটন থাকে। এ প্রোটনের একমুখী স্পিনের ঘূর্ণনকে প্রশমি করার মতো আর একটি প্রোটন যুগল নেই বিধায় পানির H পরমাণু একটি ছোট চুম্বকের ন্যায় আচরণ করে এবং তা রাবার লাটিমের মতো ঘুরে। পানির H-পরমাণু MRI এর প্রতি সংবেদনশীল হয়।

Earn $401 by browsing only!!

1946 সালে পদার্থবিজ্ঞানী Felix Bloch এবং Edward Mills Purcell সর্বপ্রথম MRI পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। পরবর্তী সময়ে MRI পদ্ধতি চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিশেষ করে নিউরো সাইন্সে ব্যাপক পরিবর্তন এনে দেয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে MRI এর ব্যবহারের ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশ বিশেষ করে মস্তিষ্কের টিউমার সনাক্ত করছে , রক্তক্ষরণজনিত অবস্থা নির্ধারণে পূর্ণমাত্রায় সক্ষম হয়েছে। এটি নিউক্লীয় চৌম্বকীয় অনুরণন নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত।এ পদ্ধতি ব্যবহার করে মস্তিষ্কের অভ্যন্তরের কোষ কলার ত্রিমাত্রিক ডিজিটাল প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায়। যে যান্ত্রিক মাধ্যমে চৌম্বক ক্ষেত্র ও রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে মানবদেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ছবি তৈরি করে রোগ নির্ণয় করা হয় সেটাই MRI।

বিশেষ নিউক্লিয়াসের চুম্বকীয় ধর্মকে পরিবর্তন করে সংশ্লিষ্ট অঙ্গের প্রতিচ্ছবি তৈরি করে যে পরীক্ষার সাহায্যে রোগ নির্ণয় করা হয় তাকে MRI পরীক্ষা বলা হয়। এ পরীক্ষার মাধ্যমে মানব দেহের অভ্যন্তরীণ প্রতিচ্ছবি সৃষ্টির মাধ্যমে দেহের অভ্যন্তরীণ সব কোষকলা ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে খুঁটিনাটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানা সম্ভব হয়। এজন্য রোগের উৎস জানা সহজতর হয়। এ পদ্ধতিতে সমস্ত মানবদেহ চৌম্বক ক্ষেত্র ও রেডিও তরঙ্গের মধ্যে নিয়ে আসা হয়। এসব তথ্যের ভিত্তিতে রোগ নির্ণয় ও রোগের উৎস সম্পর্কে জানা সহজতর হয়।

মানবদেহের কোষে H, C,O,F S,P নিউক্লিয়াস উপস্থিত থাকে। এ কারণে MRI প্রযুক্তি মানবদেহে পূর্ণমাত্রায় কার্যকরী হয়। MRI প্রযুক্তিতে চৌম্বক ক্ষেত্রের সাথে রেডিও ওয়েভ ব্যবহার করা হয়। এ ব্যবস্থায় সমগ্র মানবদেহে কোষকে চৌম্বক ক্ষেত্র ও রেডিও ওয়েভের মধ্য দিয়ে আসা হয়। পরীক্ষাধীন মানবদেহের উপর বাহ্যিক চৌম্বক ক্ষেত্রে লম্বভাবে রেডিও ফ্রিকুয়েন্সি রেডিয়েশন আরোপ করা হয়। ফলে পরীক্ষাধীন মানবদেহ একটি চৌম্বক রেজোন্যান্স ই করে। এটিই রোগ নির্ণয়ের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। রেজোন্যান্সের প্রভাবে H-নিউক্লিয়াস নিম্ন শক্তিস্তর থেকে উচ্চ শক্তিস্তরে উন্নীত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি শোষণ করে। এ অবস্থায় রেডিও ফ্রিকুয়েন্সির শক্তি H-নিউক্লিয়াসে শক্তিস্তর দুটির পার্থক্যের সমান হয়।

প্রযুক্ত চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে H-নিউক্লিয়াসের শক্তিস্তরের পার্থক্য প্রযুক্ত চৌম্বক ক্ষেত্রের সমকোণে প্রয়োগকৃত বেশি ফ্রিকুয়েন্সি সমান হওয়ার কারণে H-নিউক্লিয়াস উচ্চতর শক্তিস্তরে অবস্থান করে তাকে রেজোন্যান্স বলা হয়।

MRI মেশিনে 0.5 – 1.5 T (T = টেসলা, Tesla) মাত্রার চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রয়োজন হয়। মানবদেহকে যখন বৃহৎ চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে স্থাপন করা হয়, তখন দেহের অসংখ্য মুক্ত H-নিউক্লিয়াস বাহ্যিক চুম্বক ক্ষেত্রের দিকের সাথে শ্রেণিবদ্ধভাবে বিন্যস্ত হয় এবং একটি নিট চৌম্বক ক্ষেত্রের সৃষ্টি করে। তখন H-নিউক্লিয়াস প্রযুক্ত চৌম্বক ক্ষেত্রের চারদিকে অগ্রগমন গঠি লাভ করে আবর্তন করতে থাকে। একে লামোর অগ্রগমন গতি (Lamor Precessional Motion) বলা হয়।

এক্ষেত্রে H-নিউক্লিয়াসগুলো তাদের আবর্তন কক্ষ আরোপিত চৌম্বক ক্ষেত্রের সাথে নির্দিষ্ট কৌণিক দূরত্ব বজায় রেখে আবর্তন করতে থাকে।

 আরো দেখুন :"ইলেকট্রন বিন্যাস পর্যায় সারণির মূল ভিত্তি "- এক দফাতেই শেষ!

33 সংখ্যার বিশেষত্ব


-->