-->

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় তেজস্ক্রিয়তা।

কিছু কিছু পদার্থ আছে যা থেকে আপনা-আপনি রশ্মি অনবরত নির্গত হয় এবং এর বৈশিষ্ট্য সাধারণ আলোক রশ্মির চেয়ে ভিন্ন। এসব রশ্মি (i) অস্বচ্ছ পদার্থের ভেতর দিয়ে চলাচল করতে পারে (II) যে গ্যাসের মধ্য দিয়ে যায় তাকে আয়নিত করতে পারে এবং (iii) অন্ধকারে রাখা ফটোগ্রাফীর প্লেটের উপর দাগ ফেলতে পারে। এ ধরনের বিশেষ গুণবিশিষ্ট রশ্মিকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি এবং যে সব পদার্থ থেকে এসব রশ্মি বেরোয়, তাদের তেজস্ক্রিয় পদার্থ এবং তেজস্ক্রিয় পদার্থের এ ধরনের রশ্মি বিকিরণের বৈশিষ্ট্যকে তেজস্ক্রিয়তা বলে।

তেজস্ক্রিয়তার প্রয়োগ (Applications of radioactivity):
তেজস্ক্রিয়তার প্রয়োগ বিশ্বব্যাপী এত ব্যাপকতা লাভ করছে যে, এ সম্পর্কিত সম্প্রসারণশীল জ্ঞান ও সম্ভাবনাকে সমন্বিত করার জন্য বিজ্ঞানের একটি নতুন শাখা খোলা হয়েছে যার নাম 'Tracer Chemistry'। স্বচ্ছন্দ জীবনের প্রত্যাশায় মানুষ আজ শিল্প কারখানায়, চিকিৎসা বিজ্ঞানে, জীববিজ্ঞানে, কৃষিক্ষেত্রে, শক্তি উৎপাদনে, পৃথিবীর বয়স নির্ধারণে ব্যাপকভাবে তেজস্ক্রিয়তা তথা তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ ব্যবহার করছে। যেমন:

১. শিল্প কারখানায় : শিল্প কারখানায় উৎপাদিত পাতলা পাতের পুরুত্ব নির্ণয়ে, ট্যাবলেট-ক্যাপসুল বা সিগারেট গণনায়, অভ্যন্তরীণ ফাটলের অস্তিত্ব নির্ণয় প্রভৃতি নানা রকম কাজে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ ব্যবহার করা হয়।

২. চিকিৎসা বিজ্ঞানে : চিকিৎসা বিজ্ঞানে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের ব্যবহার এক কথায় বৈপ্লবিক। তেজস্ক্রিয় কোবাল্ট--60 এর সাহায্যে ক্যান্সার নিরাময়, ফসফরাস-32 দিয়ে রক্তাল্পতাজনিত রোগ পলিসাইথেমিয়াভেরা, আয়োডিন-131 ব্যবহার করে থাইরয়েড গ্রন্থির রোগ চিকিৎসা এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের আরো অসংখ্য ক্ষেত্রে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের ব্যবহার আজকাল নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোগগ্রস্ত স্থান শনাক্তকরণে এর ব্যবহার জনপ্রিয় হচ্ছে।এক্ষেত্রে Tc - 99 ব্যবহার করে রোগাক্রান্ত স্থানের ছবি তোলা যায়।Pu-238 হার্টে পেসমেকার বসাতে ব্যবহৃত হয়।Sr-89,153-Sm ব্যবহার করে হাড়ের ব্যথার চিকিৎসা করা হয়।ব্রেইন ক্যান্সার নিরাময়ে ইরিডিয়াম আইসোটোপ কাজে লাগে।

আরো দেখুন:নিউক্লিয়ার ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স (NMR) ও ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (MRI)

৩. কৃষি বিজ্ঞানে : উদ্ভিদের বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ এবং পচনশীল কৃষিজ দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়াও উন্নত মানের বীজ উদ্ভাবনের মাধ্যমে ফলন বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়।

8. জীব বিজ্ঞানে : তেজস্ক্রিয়তার সাহায্যে মানব দেহের গঠন রহস্য উদঘাটনে মানুষ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। মানুষের প্রত্যাশা- এভাবে চললে হয়তো একদিন জীবন বা প্রাণের স্পন্দন সৃষ্টি করা অসম্ভব হবে না।

৫. পৃথিবীর বয়স নির্ধারণে :আবিষ্কৃত জীবাশ্ম বা ফসিল-এ তেজস্ক্রিয় কার্বনের (C-14) তেজস্ক্রিয়তা নির্ণয় করে তা থেকে জীবাশ্মের বয়স তথা পৃথিবীর আনুমানিক বয়স নির্ণয় করা যায়।

৬. খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণে : পচনশীল খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণের কাজে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
৭. জীবন রহস্য উদঘাটনে : তেজস্ক্রিয় ফসফরাস (P-32) এবং কার্বন (C-14) ব্যবহার করে ডিঅক্সি রাইবো নিউক্লেয়িক এসিড (DNA) এবং রাইবোনিউক্লেয়িক এসিড (RNA) এর গঠনের হার পর্যালোচনা করে মানুষ জীবন গঠন সম্পর্কে অনেক তথ্য উদঘাটনে সক্ষম হয়েছে। এ কারণে অধুনা প্রাণের স্পন্দন সৃষ্টি সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা কিছুটা আশাবাদী হয়ে উঠেছেন।

৮. রাসায়নিক বিক্রিয়ার ক্রিয়া-কৌশল নির্ধারণে : রাসায়নিক বিক্রিয়ার ক্রিয়া-কৌশল নিশ্চিতকরণে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের ব্যবহার অত্যন্ত নির্ভরশীল পদ্ধতি।

আরো:EMR বর্ণালির বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবহার- একের ভিতর সব প্রস্তুতি

-->