-->

সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার দুইটি পর্যায় আছে:আলোক পর্যায় এবং আলোক নিরপেক্ষ পর্যায়।আলোক পর্যায়ে উৎপন্ন ATP ব্যবহার করে আলোক নিরপেক্ষ পর্যায়ে কার্বন বিজারণের মাধ্যমে শর্করা তৈরি হয়।কার্বন বিজারণ তিনভাবে ঘটতে পারে:

তো সাধারণত আমাদের কারিকুলামে ক্যালভিন চক্র এবং হ্যাচ ও স্ল্যাক চক্রই পড়ানো হয়ে থাকে।কার্বন বিজারণের পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে অনেকসময় উদ্ভিদকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়: C3 উদ্ভিদ এবং C4 উদ্ভিদ। আজকের আলোচনা হবে এই দুই ধরনের উদ্ভিদ নিয়ে এবং এর মাধ্যমে আমরা ক্যালভিন চক্র এবং হ্যাচ ও স্ল্যাক চক্রের পার্থক্যটাও বোঝার চেষ্টা করব।

C3 উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য :

যে সব উদ্ভিদের ক্যালভিন চক্র ঘটে এবং প্রথম স্থায়ী পদার্থরূপে 3-কার্বনবিশিষ্ট 3-ফসফোগ্লিসারিক অ্যাসিড উৎপন্ন য়, সে সব উদ্ভিদকে C3 উদ্ভিদ বলে। আর এই চক্রকে C3 চক্র বলে।

শৈবাল, ব্রায়োফাইটস, টেরিডোফাইটস ও নগ্নবীজী উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষণ পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে তার সবগুলোতেই C3 চক্র পাওয়া গেছে। অধিকাংশ আবৃতবীজী উদ্ভিদে, বিশেষ করে দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদে C3 চক্র বিদ্যমান। বেশ কিছু একবীজপত্রী উদ্ভিদেও C3 চক্র লক্ষ্য করা যায়। 


C3 উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ:

১। C3 উদ্ভিদের স্টোমাটা দিনের বেলায় খোলা থাকে এবং রাতে বন্ধ থাকে।

২। C3 উদ্ভিদের পাতায় বান্ডলসীথ ঘিরে মেসোফিল টিস্যুর কোনো পৃথক স্তর থাকে না অর্থাৎ ক্র্যাঞ্জ অ্যানাটমি অনুপস্থিত।

৩। ক্লোরোপ্লাস্টে একই ধরনের গ্রানাম থাকে।

৪। C3 উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণের জন্য তাপমাত্রা 10–25°C প্রয়োজন ।

৫। বায়ুমণ্ডলে 20% এর বেশি Oথাকলে C3 উদ্ভিদের কার্বন বিজারণ বাধাগ্রস্ত হয়।

৬। বাতাসে 50-150 ppm (Parts per million) CO2 এর উপস্থিতিতে C3 চক্র ভালো চলে। 

৭। C3 উদ্ভিদে রাইবুলোজ-1,5 বিসফসফেট প্রথম CO2 গ্রহণ করে ।

৮। এদের শর্করা উৎপাদন ক্ষমতা প্রজাতিভেদে নিম্ন থেকে উচ্চ।

৯। C3 উদ্ভিদে ক্যালভিন চক্রের প্রথম স্থায়ী পদার্থ 3-ফসফোগ্লিসারিক অ্যাসিড।

Related:প্রস্বেদন একটি অপ্রয়োজনীয় অমঙ্গল কেন?

C4 উদ্ভিদের পরিচিতি:

যে সব উদ্ভিদের হ্যাচ ও স্ল্যাক চক্র ঘটে এবং প্রথম স্থায়ী পদার্থরূপে 4-কার্বনবিশিষ্ট অক্সালো এসিটিক অ্যাসিড উৎপন্ন হয়, সে সব উদ্ভিদকে Cউদ্ভিদ বলে। আর এই চক্রকে C4 চক্র বলে।


 C4 উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য :

১.C4 উদ্ভিদ প্রচণ্ড আলোতে অর্থাৎ 30-45°C তাপমাত্রাযুক্ত অঞ্চলে বেশি জন্মায়। গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলের একবীজপত্রী উদ্ভিদ এবং বেশ কিছু দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদেও C4 চক্র দেখা যায়। 

২। Cউদ্ভিদ উচ্চ তাপমাত্রায় সালোকসংশ্লেষণ করতে পারে। 

৩। এরা পানির অপচয় কম করে এবং শুষ্ক অঞ্চলেও অভিযোজিত। 

৪.বান্ডলসীথ কোষ ও মেসোফিল কোষে অনেক প্লাজমোডেজমাটা থাকে।

৫। C4 উদ্ভিদের পাতার বান্ডলসীথ কোষে ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে। 

৬। বান্ডলসীথের কোষগুলো ভার্কুলার বান্ডলের সাথে অরীয়ভাবে অবস্থান করে।

৭। বান্ডলসীথের মাঝে যে ক্লোরোপ্লাস্ট দেখা যায়, তাতে গ্রানা অনুপস্থিত কিন্তু মেসোফিল কোষে উন্নত প্রকৃতির গ্রানা বিদ্যমান। যেমন-ইক্ষু উদ্ভিদের পাতা।

৮। C4 উদ্ভিদের মেসোফিল কোষে রাইবুলোজ-1,5 বিসফসফেট কার্বোক্সিলেজ নামক এনজাইমের কার্যকারিতা অনুপস্থিত।

৯। NADP ম্যালিক অ্যাসিড এনজাইমের উপস্থিতিতে বান্ডলসীথ ক্লোরোপ্লাস্টে C চক্র পরিচালনার প্রয়োজনীয় বিপাকীয় শক্তি NADPH +H+ উৎপাদিত হয়।

১০। বান্ডলসীথ ক্লোরোপ্লাস্টে প্রচুর স্টার্চ দানা থাকে কিন্তু মেসোফিল ক্লোরোপ্লাস্টে স্টার্চ দানা থাকে না ।

১১। রুবিস্কো এনজাইম মেসোফিলে থাকে না, বান্ডলসীথে অবস্থান করে।

১২। Cউদ্ভিদে আলোকশ্বসন প্রায় অনুপস্থিত এবং সহজে শনাক্ত করা যায় না। তাই সালোকসংশ্লেষণে উৎপাদিত শর্করার অপচয় কম হয়।

নিচে C3 ও C4 উদ্ভিদ এর পার্থক্য দেয়া হলো:


C3 C4
1.উচ্চ তাপমাত্রায় খাপখাইয়ে নিতে সক্ষম নয়। 1.উচ্চ তাপমাত্রায় খাপখাইয়ে নিতে সক্ষম।
2.পাতার বান্ডলসীথকে ঘিরে মেসোফিল কোষের কোনো পৃথক স্তর থাকে না। 2.পাতার বান্ডলসীথকে ঘিরে অরীয়ভাবে সজ্জিত কোষের ঘন স্তর বিদ্যমান (ক্র্যাঞ্জ অ্যানাটমি)।
3.মেসোফিল কোষে আলোক বিক্রিয়া এবং ক্যালভিন চক্র সম্পন্ন হয়। 3.মেসোফিল কোষে আলোক বিক্রিয়া এবং বাজ কোষে CO2 সৃষ্টি ও ক্যালভিন চক্র সম্পন্ন হয়।
4.মনে করা হয় বেশির ভাগ C3 উদ্ভিদ অপেক্ষাকৃত শীতপ্রধান অঞ্চলে উৎপত্তি লাভ করেছে। 4.মনে করা হয় বেশির ভাগ C4 উদ্ভিদ অপেক্ষাকৃত গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে উৎপত্তি লাভ করেছে।
5.এসব উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ হার কম।. 5.এসব উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ হার বেশি।
6.স্বাভাবিক পরিমাণের চেয়ে 1% বেশি অক্সিজেনের উপস্থিতিতে সালোকসংশ্লেষণ বাধাপ্রাপ্ত হয়। 6.অতিরিক্ত অক্সিজেনের উপস্থিতিতে সালোকসংশ্লেষণ বাধাপ্রাপ্ত হয় না।
7.গঠনগতভাবে ক্লোরোপ্লাস্ট একই রকম। 7.গঠনগতভাবে ক্লোরোপ্লাস্ট দুই রকম : (i) গ্রানাযুক্ত মেসোফিল ক্লোরোপ্লাস্ট এবং (ii) গ্রানাবিহীন বান্ডলসীথ ক্লোরোপ্লাস্ট।
8.সালোকসংশ্লেষণের জন্য বায়ুমণ্ডলে CO2 এর ঘনত্ব কমপক্ষে 50 ppm (parts per million) প্রয়োজন । 8.সালোকসংশ্লেষণের জন্য বায়ুমণ্ডলে CO2 এর ঘনত্ব কমপক্ষে 0.1 ppm (parts per million) প্রয়োজন ।
9.উদাহরণ :ধান, গম, বার্লি, আম, জাম, কাঁঠালসহ উদ্ভিদ। 9.উদাহরণ: গিনি ঘাস, ইক্ষু, ভুট্টা, মুথা ঘাস ইত্যাদি।

তো এবার তাহলে ক্যালভিন চক্র আর হ্যাচ ও স্ল্যাক চক্রের পার্থক্য তৈরির চেষ্টা করা যাক:

ক্যালভিন চক্র হ্যাচ ও স্ল্যাক চক্র
1.কেবল মেসোফিল কোষে হয়। 1.মেসোফিল ও বান্ডলসীথ কোষে হয়।
2.ফটোরেসপিরেশন ঘটে। 2.ফটোরেসপিরেশন ঘটে না।
3.আদর্শ তাপমাত্রা 10°- 25°C। 3.আদর্শ তাপমাত্রা 30°- 45°C।
4.প্রথম স্থায়ী পদার্থ 3-ফসফোগ্লিসারিক এসিড। 4.প্রথম স্থায়ী পদার্থ অক্সালো এসিটিক এসিড।
5.প্রাথমিক CO2 গ্রহীতা RuBP (রাইবুলোজ- 1,5 বিসফসফেট) 5.প্রাথমিক CO2 গ্রহীতা PEP (ফসফোইনাল পাইরুভিক এসিড)।

Also read:DNA রেপ্লিকেশন ও ট্রান্সক্রিপশন

ট্রান্সক্রিপশন ও ট্রান্সলেশন এর পার্থক্য

-->