-->

 উদ্ভিদ অব্যাহতভাবে তার মূলরোম দিয়ে পানি শোষণ করে এবং সেই পানি পাতা পর্যন্ত পৌছায়। উদ্ভিদ কর্তৃক শোষিত পানির সামান্য অংশই তার বিভিন্ন জৈবনিক ক্রিয়া-বিক্রিয়ায় খরচ হয় এবং বেশির ভাগই (শতকরা ৯৯ ভাগ পর্যন্ত) বাষ্পাকারে বের হয়ে যায়।

যে শারীরতাত্ত্বিক (physiological) প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদের বায়বীয় অঙ্গ (সাধারণত পাতা) হতে অতিরিক্ত পানি বাষ্পাকারে বের হয়ে যায়, তাকে প্রস্বেদন বা বাষ্পমোচন বলে। বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্ত উদ্ভিদের যে কোনো অংশে প্রস্বেদন সংঘটিত হয়। তবে পাতাই উদ্ভিদের প্রধান প্রস্বেদন অঙ্গ। গড় হিসেবে শোষিত পানির মাত্র ১% দেহে অবস্থান করে ও কাজে লাগে, বাকি ৯৯% পানি দেহ থেকে বাষ্পাকারে বের হয়ে যায়। এটি উদ্ভিদের অত্যাবশ্যকীয় প্রক্রিয়া, তবে অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিকরও হতে পারে। বিজ্ঞানী কার্টিস (Curtis) প্রস্বেদনকে ‘প্রয়োজনীয় অমঙ্গল' (necessary evil) বলেছেন। 

প্রস্বেদনের প্রকার : 

যে পথে পানি বাষ্পাকারে উদ্ভিদের দেহাভ্যন্তর হতে বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে সে পথের ভিন্নতার উপর নির্ভর করে প্রস্বেদনকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়; যথা:

(১) পত্ররন্ধ্রীয় প্রস্বেদন (Stomatal transpiration) পত্ররন্ধ্রের মধ্য দিয়ে প্রস্বেদন;

(২) ত্বকীয় বা কিউটিকুলার প্রস্বেদন (Cuticular transpiration):পত্রত্বকের কিউটিকলের মধ্য দিয়ে প্রস্বেদন

(৩) লেন্টিকুলার প্রস্বেদন (Lenticular transpiration):কাণ্ডের লেন্টিসেলের মধ্য দিয়ে প্রস্বেদন।

(১) পত্ররন্ধ্রীয় প্রস্বেদন :

পানি বাষ্পাকারে পত্ররন্ধ্র পথে বেরিয়ে বাতাসের সাথে মিশে যাওয়াকে পত্ররন্ধ্রীয় প্রস্বেদন বলে। পাতায় এবং কচি কাণ্ডে অসংখ্য পত্ররন্ধ্র থাকে (ফুলের বৃতি, পাপড়িতেও পত্ররন্ধ্র থাকে)। শতকরা ৯৫-৯৮ ভাগ প্রস্বেদন এ প্রক্রিয়ায় হয়ে থাকে। কাজেই পাতাই প্রস্বেদনের প্রধান অঙ্গ।

(2) ত্বকীয় বা কিউটিকুলার প্রস্বেদন :

উদ্ভিদ দেহকে শুষ্কতার হাত থেকে রক্ষার জন্য এর বহিঃস্তরে যে কাইটিন জাতীয় অভেদ্য রাসায়নিক পদার্থের আস্তর থাকে তাকে কিউটিকল বলে। কিউটিন হলো একটি স্নেহজাতীয় পদার্থ। বিশেষত পাতার উভয় পাশের বহিঃত্বকে কিউটিকল থাকে। যে সব উদ্ভিদ আর্দ্র, ছায়াময় পরিবেশে জন্মে তাদের কিউটিকল বেশ পাতলা থাকে। এ ধরনের উদ্ভিদের ত্বকীয় প্রস্বেদনের হার বেশি হয়। কিউটিকল পাতলা হলে কিউটিকল ভেদ করেও কিছু পানি বাষ্পাকারে বের হয়ে যায় অর্থাৎ প্রস্বেদন হয়। ত্বকের কিউটিকল ভেদ করে সংঘটিত প্রস্বেদনকে ত্বকীয় বা কিউটিকুলার প্রস্বেদন বলে। যদিও পত্ররন্ধ্রীয় প্রস্বেদনের তুলনায় এর পরিমাণ অনেক কম। তথাপি অত্যধিক শুষ্কাবস্থায় যখন পত্ররন্ধ্র বন্ধ হয়ে যায় (এবং এর ফলে পত্ররন্ধ্রীয় প্রস্বেদন বন্ধ হয়ে পড়ে) তখনও ত্বকীয় প্রস্বেদন চলতে পারে। এমতাবস্থায় মাত্রাতিরিক্ত প্রস্বেদনের ফলে উদ্ভিদের প্রভূত ক্ষতি, এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে। মরুজ উদ্ভিদের কিউটিকল বেশ পুরু থাকে বলে এদের ত্বকীয় প্রস্বেদন অত্যন্ত কম হয়।

(৩) লেন্টিকুলার প্রস্বেদন : 

উদ্ভিদের সেকেন্ডারি বৃদ্ধির ফলে অনেক সময় কাণ্ডের কর্ক টিস্যুর স্থানে স্থানে ফেটে গিয়ে লেন্টিসেল (lenticel)-এর সৃষ্টি হয়। লেন্টিসেল দিয়ে কিছু কিছু পানি বাষ্পাকারে বের হয়ে যায়। পানি যখন বাষ্পাকারে লেন্টিসেল পথে বেরিয়ে যায়, তখন তাকে লেন্টিকুলার প্রস্বেদন বলে। খুব কম পরিমাণ পানিই এ পথে বের হয়। লেন্টিসেল পেরিডার্ম স্তরে অবস্থান করে এবং সব সময় খোলা থাকে। এজন্য দিবা-রাত্রি সমভাবে লেন্টিকুলার প্রস্বেদন চলতে থাকে। উদ্ভিদ প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় যে পরিমাণ পানি হারায় তার প্রায় ১% লেন্টিকুলার প্রস্বেদনের মাধ্যমে হয়ে থাকে।

পত্ররন্ধীয় প্রস্বেদন প্রক্রিয়া: 
পত্ররন্ধগুলো প্রস্বেদনের অতি প্রয়োজনীয় অংশ। এগুলো দিনের বেলায় খোলা থাকে এবং রাতে বন্ধ থাকে। পত্ররন্ধের মাধ্যমে যে প্রস্বেদন হয় তাকে পত্ররন্ধীয় প্রস্বেদন বলে। একটি উদ্ভিদে সংঘটিত প্রস্বেদনের শহর প্রায় ৯৫-৯৮ ভাগই পত্ররন্ধ্রীয় প্রক্রিয়ায় ঘটে থাকে। পত্ররন্ধ্র খোলা থাকা অবস্থায় প্রস্বেদন কার্য সম্পন্ন হয়, পত্রবন্ধ বন্ধ থাকা অবস্থায় প্রস্বেদন হয় না। মাটি থেকে শোষণকৃত পানি মূল থেকে কাণ্ড ও তার শাখা-প্রশাখা হয়ে পাতায় পৌঁছায় এবং পরে শিরা-উপশিরার মাধ্যমে পাতায় প্যালিসেড প্যারেনকাইমা ও স্পঞ্জী প্যারেনকাইমা কোষে পৌঁছায়। উক্ত পানি শোষণ করে পাতার প্যারেনকাইমা কোষগুলো সম্পৃক্ত (saturated) হয় এবং ঐ পানির অধিকাংশই পাতার অভ্যন্তরস্থ ও বহিস্থ তাপ, চাপ ও অন্যান্য পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বাষ্পে পরিণত হয়। ঐ বাষ্প তখন পাতার টিস্যুর আত্মকোষীয় ফাঁকে এবং পত্ররন্ধ্রসমূহের নিচে অবস্থিত পত্ররন্ধীয় প্রকোষ্ঠে (গহ্বরে) জমা হয়। রক্ষীকোষের স্ফীতির কারণে পত্ররন্ধ্র খুলে গেলে সঞ্চিত বাষ্প ঐ রন্ধ্রপথে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় বের হয়ে বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে। বাইরে বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকলে প্রস্বেদন প্রক্রিয়া দ্রুত হয়।

প্রস্বেদনের প্রভাবকসমূহ :

প্রস্বেদনের প্রভাবকসমূহকে দু'ভাগে ভাগ করা যায়; যথা: বাহ্যিক প্রভাবকসমূহ ও অভ্যন্তরীণ প্রভাবকসমূহ।

More:পলিস্যাকারাইড : স্টার্চ,সেলুলোজ ও গ্লাইকোজেনের তুলনা

বাহ্যিক প্রভাবকসমূহ :বাহ্যিক প্রভাবকসমূহ নিম্নরূপ:

। আলো : 

প্রখর সূর্যালোক স্বাভাবিকভাবেই বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে এবং যার ফলে বায়ুর আপেক্ষিক অর্থে হ্রাস পায় এবং প্রস্বেদনের হার বেড়ে যায়। আলোকের উপস্থিতিতে পত্ররন্ধ্র খোলা থাকে এবং আলোর অনুপস্থিতিতে পরে বন্ধ হয়ে যায়; আর পত্ররন্ধ্র খোলা ও বন্ধ হওয়ার উপরই বেশির ভাগ প্রস্বেদন নির্ভরশীল। এ সমস্ত কারণেই প্রস্বেদনের হ্রাস-বৃদ্ধিতে আলোর গুরুত্ব শীর্ষস্থানীয়। ব্লু লাইট পত্ররন্ধ্র খোলা ত্বরান্বিত করে।

২.তাপের পরিবর্তন :

 তাপের হ্রাস-বৃদ্ধির ফলে প্রস্বেদন হারেরও হ্রাস-বৃদ্ধি হয়ে থাকে। কারণ তাপ বাড়লে বায়ুমণ্ডলের বাষ্প ধারণ ক্ষমতা বেড়ে যায়, আপেক্ষিক আর্দ্রতা কমে যায়, ফলে বায়ু অধিক পরিমাণ জলীয়বাষ্প শোষণ করতে পারে। অপরদিকে তাপ বাড়লে পানিও দ্রুত বাষ্পে পরিণত  হয় এবং প্রবেদনের হারকে ত্বরান্বিত করে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে পত্ররন্ধের আয়তনেরও বৃদ্ধি ঘটে থাকে। সুতরাং তাপ বিভিন্ন ভাবে হয়ে প্রস্বেদন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে থাকে।

৩। আপেক্ষিক আর্দ্রতা :

আপেক্ষিক আর্দ্রতা কম হলে প্রস্বেদনের হার বেড়ে যায়। কারণ আপেক্ষিক আর্দ্রতা কম হলে বায়ু অধিক পরিমাণ জলীয় বাষ্প গ্রহণ করতে পারে। অপরদিকে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেড়ে গেলে বায়ু জলীয়বাষ্প ধারণ করার ক্ষমতা হারিয়ে বলে, ফলে প্রস্বেদনের হার হ্রাস পায়। 

৪। বায়ুপ্রবাহ : 

উদ্ভিদের প্রস্বেদন অঙ্গের চারপাশের বায়ু সাধারণত বেশি আর্দ্র থাকে। এ অঞ্চল কোষাভ্যন্তর হতে নির্গত জলীয়বাষ্প সরাসরি গ্রহণ করে সম্পৃক্ত হয় এবং ক্রমান্বয়ে প্রস্বেদনের হারের হ্রাস ঘটে। প্রবাহিত বায়ু পাতার নিকট হতে আর্দ্র বায়ু প্রবাহিত করে নিয়ে যায়, ফলে স্থানটি কম আর্দ্র বায়ু দ্বারা পরিপূর্ণ হয়। কম আর্দ্র বায়ু কোষাভ্যন্তর হতে জলীয়বাষ্প অধিকমাত্রায় গ্রহণ করে প্রস্বেদনের হারকে বাড়িয়ে দেয়।

More:DNA রেপ্লিকেশন ও ট্রান্সক্রিপশন

ট্রান্সক্রিপশন ও ট্রান্সলেশন এর পার্থক্য

৫। আবহাওয়ামণ্ডলের চাপ : 

আবহাওয়ামণ্ডলে চাপ কমার কারণে কম তাপে পানি বাষ্পে পরিণত হয় ফলে চাপ কমলে প্রস্বেদনের হার বেড়ে যায়। অনুরূপভাবে চাপ বাড়লে প্রস্বেদনের হার কমে যায়।

৬। মাটিস্থ পানি :

মাটিতে পানির পরিমাণ বেশি থাকলে উদ্ভিদ মাটি হতে অধিকমাত্রায় পানি গ্রহণ করতে পারে। এর হলে প্রস্বেদনের হারও বেড়ে যায়। অপরদিকে মাটিতে পানির প্রাপ্যতা কমে গেলে প্রস্বেদনের হারও ক্রমান্বয়ে কমে যায়।

অভ্যন্তরীণ প্রভাবকসমূহ : অভ্যন্তরীণ প্রভাবকসমূহ নিম্নরূপ :

। মূল-বিটপ অনুপাত:

 আনুপাতিক হারে মূলের পরিমাণ কম হলে উদ্ভিদের জন্য মাটি হতে পানির প্রাপ্যতাও কমে এবং প্রস্বেদনের হারও কমে যায়। অর্থাৎ প্রস্বেদন অঞ্চল অপেক্ষা শোষণ অঞ্চল কম হলে প্রস্বেদনের হার হ্রাস পায়।

২। পাতার আয়তন ও সংখ্যা:

পাতার আয়তন ও সংখ্যার তারতম্যে প্রস্বেদনের তারতম্য হয়। পাতার আয়তন ও সংখ্যা যত বেশি হবে প্রস্বেদনও তত বেশি হবে।

৩। পাতার গঠন: 

পাতার গঠনের উপর প্রস্বেদনের হার নির্ভরশীল। পাতায় পাতলা কিউটিকল, পাতলা কোষ প্রাচীর, অধিক স্পঞ্জি টিস্যু ও উন্মুক্ত পত্ররন্ধ থাকলে প্রস্বেদন তুলনামূলকভাবে বেশি হয় কিন্তু পুরু কিউটিকল, অধিক প্যালিসেড প্যারেনকাইমা এবং পত্রবদ্ধ গর্ভস্থিত থাকলে প্রস্বেদনের হার কমে যায়। পাতার গায়ে পত্ররন্ধের সংখ্যা, রক্তের পরিমাণ,দেহকোষের গঠন প্রভৃতি প্রস্বেদনের হারকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

৪। মেসোফিল টিস্যুতে পানির পরিমাণ :

 পাতার মেসোফিল টিস্যুতে পানির পরিমাণ বেশি হলে প্রস্বেদন হার বাড়ে। মেসোফিল টিস্যুতে পানির পরিমাণ কমলে প্রস্বেদন হার কম হয়। 

।জীবনীশক্তি:

উদ্ভিদের জীবনীশক্তির উপরও প্রস্বেদন নির্ভর করে। সুস্থ-সবল উদ্ভিদে রোগাক্রান্ত উদ্ভিদ অপেক্ষা প্রস্বেদন বেশি হয়।

প্রস্বেদনের অপকারিতা ও উপকারিতা:

প্রস্বেদন উদ্ভিদের জন্য যেমন প্রয়োজনীয় তেমনি ক্ষতিকরও বটে। অবশ্য ক্ষতির তুলনায় উদ্ভিদ লাভবানই হয় বেশি। নিচে এটি বর্ণনা করা হলো : 

অপকারিতা বা নেতিবাচক প্রভাব : 

মাটিতে পানির অভাব দেখা দিলেই প্রস্বেদন উদ্ভিদের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়। মাটিতে পানির অভাবের জন্যই হোক বা অন্য কোনো কারণেই হোক উদ্ভিদ মাটি হতে যে পরিমাণ পানি শোষণ করে তার অধিক পরিমাণ পানি প্রস্বেদনে বের হয়ে গেলে তার অন্তচাপ কমে যায়; ফলে গাছটি নিস্তেজ হয়ে পড়ে (উইলটিং)। কয়েকদিনের জন্য এ অবস্থা চলতে থাকলে গাছটি শুকিয়ে মারা যায়। প্রস্বেদনের কারণে উদ্ভিদের শোষিত পানির কিছুটা অপচয় হয়।

প্রস্বেদনের উপকারিতা বা উদ্ভিদের জীবনে এর প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব প্রস্বেদন প্রক্রিয়া উদ্ভিদের জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজন বা গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রক্রিয়ার গুরুত্ব তথা প্রয়োজনীয়তার বিশেষ কারণগুলো নিচে দেয়া হলো:

১। পানি শোষণ :

 পাতায় প্রস্বেদনের ফলে বাহিকা নালীতে পানির যে টান পড়ে সেই টান মূলরোম কর্তৃক পানি শোষণে সাহায্য করে থাকে। তাই জীবন রক্ষাকারী পানি শোষণে প্রস্বেদনের ভূমিকা আছে।

। পানি ও খাদ্যরস উপরে উঠানো: 

পাতা ও অন্যান্য অংশে পানি ও খাদ্যরস পৌঁছানো অপরিহার্য। প্রস্বেদনের ফলে বাহিকা নালীতে পানির যে টান পড়ে তা সরাসরি পানিকে জাইলেম ভেসেলের মাধ্যমে মূল হতে কাণ্ড হয়ে পাতা পর্যন্ত পৌঁছাতে সহায়তা করে। এ পানির সাথে মূল কর্তৃক শোষিত খনিজ পদার্থ তথা সামগ্রিকভাবে খাদ্যরস উপরে উত্থিত হয়।

৩। লবণ পরিশোষণ :

 প্রস্বেদনের কারণে চারদিক থেকে লবণ উদ্ভিদমূলের কাছাকাছি আসে, তাই উদ্ভিদ সহজে লবণপরিশোষণ করতে পারে। 

৪। পাতা ও অন্যান্য অংশে খনিজ লবণ পৌঁছানো : 

মূল কর্তৃক মাটি হতে যে লবণ শোষিত হয় তা স্বাভাবিকভাবে উঁচু গাছের পাতা পর্যন্ত পৌঁছাতে কয়েক বছর লাগার কথা। পাতার প্রতিটি ক্লোরোফিল অণু তৈরি হতে Mg এর দরকার যা অতিদ্রুত মূল হতে পাতা পর্যন্ত পৌঁছে থাকে কেবল প্রস্বেদনের কারণেই। কাজেই প্রস্বেদন না হলে পাতার ক্লোরোফিল সৃষ্টি বন্ধ হয়ে যেতো, ফলে খাদ্য তৈরিই বন্ধ হয়ে যেতো।

। সকল কোষে পানি সরবরাহ : 

প্রতিটি জীবিত কোষেই প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ক্রিয়া-বিক্রিয়া ঘটে থাকে। এর জন্য পানির প্রয়োজন। প্রস্বেদন প্রক্রিয়ার কারণে পানি সহজে সকল কোষে পৌঁছাতে পারে।

৬। সালোকসংশ্লেষণ: 

সালোকসংশ্লেষণের (6CO2+12H2O=C6H12O6+6H2O+6O2) মাধ্যমে খাদ্য তৈরির জন্য পানির প্রয়োজন। প্রস্বেদন না হলে এ বিপুল পরিমাণ পানি পাওয়া যেতো না, ফলে সালোকসংশ্লেষণ তথা খাদ্য তৈরি কমে যেতো, এমনকি বন্ধ হয়ে যেতো।

৭। পাতায় উপযুক্ত তাপ নিয়ন্ত্রণ : 

বিভিন্ন কাজের জন্য পাতায় একটি উপযুক্ত তাপমাত্রার দরকার। প্রস্বেদন গাছকে অত্যধিক গরম হওয়া থেকে রক্ষা করে এবং উপযুক্ত তাপমাত্রা রক্ষা করে।

 ৮। কোষ বিভাজন: 

 কোষ বিভাজনের জন্য কোষের স্ফীতি অবস্থার প্রয়োজন। প্রস্বেদন পরোক্ষভাবে এ স্ফীতি অবস্থা এবং আরো পরোক্ষভাবে কোষ বিভাজনে সহায়তা করে।

৯। দৈহিক বৃদ্ধি : 

কোষ বিভাজন, স্বাভাবিক স্ফীতি রক্ষা ইত্যাদির মাধ্যমে প্রস্বেদন গাছের দৈহিক বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।

১০। শক্তি নির্গমন : 

পাতা সূর্য হতে প্রতি মিনিটে প্রচুর শক্তি শোষণ করে। এর মাত্র শতকরা একভাগ বিভিন্ন বিক্রিয়ার জন্য খরচ হয়, বাকি অধিকাংশ তাপশক্তি প্রস্বেদনের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। নতুবা গাছ অধিক তাপে মরে যেতো।

১১। অভিস্রবণ প্রক্রিয়া :

 প্রস্বেদনের ফলে কোষরসের ঘনত্ব বাড়ে, ফলে সহজে অভিস্রবণ প্রক্রিয়া ঘটে।

১২। পাতায় ছত্রাক আক্রমণ রোধ : 

প্রস্বেদনের ফলে পাতার পৃষ্ঠে কিছু পানিগ্রাহী লবণ জমা হয়, যা ছত্রাক আক্রমণ হতে পাতাকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

১৩। খাদ্য পরিবহন:

প্রস্বেদনের ফলে উদ্ভিদ দেহের বিভিন্ন অংশে খাদ্য পরিবহন অব্যাহত থাকে।

এভাবে উদ্ভিদের জন্য ক্ষতির কারণ হওয়া সত্ত্বেও উপকারের পাল্লা ভারি হওয়ায় প্রস্বেদন প্রক্রিয়া বিবর্তিত হয়েছে।

-->