-->

 বর্ণালি (spectrum) অর্থাৎ বর্ণের সমাহার। কথাটির উদ্ভব আলোর বর্ণের সমাহার থেকে। রংধনু  হলো সূর্যের সাত বর্ণের আলোর সমাহার : বেগুনি, নীল, আসমানি, সবুজ, হলুদ, কমলা, লাল সংক্ষেপে বেনীআসহকলা (VIBGYOR)। সূর্যের সাদা আলোকে একটি প্রিজমের ভিতর দিয়ে চালনা করলে তা বিভিন্ন বর্ণের এতে বিশ্লিষ্ট হয়। বিভিন্ন তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলোর তথা বিভিন্ন বর্ণের এ সমাহারকেই বর্ণালি (spectrum) বলে।

আলো হলো আলোক ফোটনের তরঙ্গ। আর এ তরঙ্গের রয়েছে নির্দিষ্ট তরঙ্গ দৈর্ঘ্য।  সৌর আলো হলো দৃশ্যমান আলোক রশ্মি। এর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য 380-780 nm, দৃশ্যমান আলোর সবচেয়ে ক্ষুদ্র তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বেগুনি রশ্মির এবং তরঙ্গ দৈর্ঘ্য লাল রশ্মির।


সাধারণ আলো একটি তড়িৎচুম্বকীয় বর্ণালি। কোনো উৎস থেকে বিকিরিত তড়িৎচুম্বকীয় রশ্মি আলোর মতোই তরঙ্গ আকারে প্রবাহিত হয়। প্রত্যেক মৌলের পরমাণুর কেন্দ্রে ধনাত্মক নিউক্লিয়াস এবং কক্ষপথে ঋণাত্মক চার্জযুক্ত ইলেকট্রন থাকে। ফলে পরমাণুতে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক দুটি প্রান্ত থাকায় প্রতিটি পরমাণুতে এক একটি চৌম্বক ক্ষেত্র হয়। এদিকে পরমাণুর কক্ষপথে ঋণাত্মক ইলেকট্রন প্রবাহের কারণে তড়িৎ ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়। ফলে কোনো মৌলে নিম্ন চাপে উচ্চ ভোল্টের বিদ্যুৎ চালনা করা হলে বিদ্যুৎ ক্ষেত্র ও চৌম্বক ক্ষেত্রের মিথস্ক্রিয়ায় মৌল এক প্রকার রশ্মি বিকিরিত হয়। এ রশ্মিরই নাম তড়িৎচুম্বকীয় রশ্মি। এ রশ্মি বিকিরণের ফলে সৃষ্ট বর্ণালিকে তড়িৎচুম্বকীয় বর্ণালি বলে। 

দৃশ্যমান আলো সম্পূর্ণ তড়িৎচুম্বকীয় রশ্মির সামান্য অংশ মাত্র। এর অবশিষ্ট পুরোটা অদৃশ্য। দৈর্ঘ্য অনুসারে তড়িৎচুম্বকীয় বর্ণালি দৃশ্যমান ও অদৃশ্য সাতটি অঞ্চলে বিস্তৃত।নিচে এদের তরঙ্গদৈর্ঘ্য অনুসারে দেখানো হলো:



এ অঞ্চলগুলোর ব্যবহার আমরা ইতোপূর্বেই আলোচনা করেছি।


বৈশিষ্ট্য অনুসারে বর্ণালি দুই প্রকার। যথা: 



কোন পদার্থে তাপ বা তড়িৎ চুম্বকীয় রশ্মি প্রয়োগ করলে তার সাথে ঐ পদার্থের পরমাণুর মিথস্ক্রিয়া ঘটে এবং ফলে ইলেকট্রন উত্তেজিত হয়ে ভিত্তিস্তর  (ground state) থেকে উচ্চ শক্তিস্তরে স্থানান্তরিত হয়। পরে ঐ ইলেকট্রন পরমাণুস্থ নিম্ন শক্তিস্তরে ফিরে আসে।


Earn $401 by browsing!!


১. বিকিরণ বর্ণালি : 


পরমাণুর ইলেকট্রন উচ্চস্তর থেকে নিম্নস্তরে ফিরে আসার সময় আলোর বিকিরণ ঘটে। এ বিতরিত রশ্মিকে স্পেক্ট্রোমিটারে বিশ্লেষণ করলে উজ্জ্বল রেখার সমাহার পাওয়া যায়। একেই বিকিরণ বা উজ্জ্বল বর্ণালি (emission/light spectra) বলে।


২. শোষণ বর্ণালি : 


বিপরীত ক্রমে যখন পরমাণুতে ইলেক্ট্রন নিম্ন থেকে উচ্চ শক্তিস্তরে স্থানান্তরিত হয় তখন ডালোর শোষণ ঘটে। এর ফলে বর্ণালিতে যে রেখার সমাহার পাওয়া যায় তাকে শোষণ বা অনুজ্জ্বল বর্ণালি (absorption or dark spectra) বলে। এক্ষেত্রে বিকিরিত বা শোষিত শক্তির পরিমাণ  রশ্মির কম্পাংকের সমানুপাতিক।


আবার পদার্থের গঠন অনুসারে, বর্ণালি ৩ প্রকার:



১. পারমাণবিক বর্ণালি: 


লঘু চাপে গ্যাসের মধ্যে বৈদ্যুতিক ডিসচার্জ বা তড়িৎচুম্বকীয় রশ্মি প্রয়োগ করলে ইলেকট্রন উত্তেজিত হয়ে পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলে রশ্মি বিকিরিত হয়। এ বর্ণালি পারমাণবিক বর্ণালি।এখানে পদার্থের পারমাণবিক কাঠামোর জন্য বর্ণালিতে নির্দিষ্ট সহ দৈর্ঘ্যের ভিন্ন ভিন্ন রেখা পাওয়া যায়। এ ধরনের বর্ণালিকে পারমাণবিক বর্ণালি (atomic spectra) বা রেখা বর্ণালি (Line spectra) বলে।


২. আণবিক বর্ণালি: 


 কোন গ্যাস বা বাম্পকে যদি উত্তপ্ত করা হয় বা electric discharge প্রয়োগ করা হয় তবে বর্ণালিতে অনেকগুলো কাছাকাছি রেখার সমষ্টি পাওয়া যায়। একে গুচ্ছ বর্ণালি(band spectrum) বলে। দেখা যায় যে, পদার্থের একাধিক পরমাণু নিয়ে গঠিত আণবিক কাঠামোর জন্য এ ধরনের গুচ্ছ বর্ণালি পাওয়া যায়। তাই এ বর্ণালিকে আণবিক বর্ণালি (Molecular spectra) বলা হয়। অর্থাৎ কোন পদার্থের অণু তড়িৎচুম্বকীয় রেডিয়েশনের শক্তি শোষণ করলে যে বর্ণালি উৎপন্ন হয় তাকে আণবিক বর্ণালি বা গুচ্ছ বর্ণালি বলে। এ শ্রেণির বর্ণালির মধ্যে পড়ে:



গ্যাসীয় অবস্থায় স্থায়ী ডাইপোল মোমেন্ট বিশিষ্ট কোন আবর্তনশীল অণু মাইক্রোওয়েভ অঞ্চলের রেডিয়েশন শোষণ বা বিক্রিরণ করলে অণুটি কোন নির্দিষ্ট আবর্তন শক্তিস্তর থেকে পরবর্তী উচ্চতর আবর্তন শক্তিস্তরে উন্নীত হয়। এর ফলে সৃষ্ট বর্ণালি আবর্তন বর্ণালি বা মাইক্রোওয়েভ বর্ণালি নামে পরিচিত। কোন স্থায়ী বা পরিবর্তনযোগ্য ডাইপোল মোমেন্ট বিশিষ্ট কম্পনশীল অণু IR অঞ্চলের রেডিয়েশন  শোষণ করলে অণুটি নির্দিষ্ট কম্পন শক্তিস্তর থেকে পরবর্তী উচ্চতর কম্পন শক্তিস্তরে উন্নীত হয়। এর ফলে যে বর্ণালি সৃষ্টি হয় তাকে কম্পন বর্ণালি তথা IR বর্ণালি বলে। কোন মৌলের পরমাণুর নিউক্লিয়াসের  প্রোটনের বিশেষ অভিবিন্যাসের কারণে যে বর্ণালির সৃষ্টি হয় তাকে নিউক্লিয়ার ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স (NMR) বর্ণালি বলে। এসব বর্ণালিমিতিতে তরঙ্গ সংখ্যার বিপরীতে % শোষণ বা বিকিরণকে আলেখিত করলে দেখা যায় যে, % শোষণের জন্য উপরের দিকে Peak  এবং বিকিরণের জন্য নিচের দিকে depression পাওয়া যায়।


৩.নিরবচ্ছিন্ন বর্ণালি:


 যখন কোন কঠিন পদার্থকে ভাস্বরতা (incandescence) পর্যন্ত উত্তপ্ত করা হয় তখন পদার্থ যে বর্ণালি দেয় তাকে অবিচ্ছিন্ন বর্ণালি (continuous spectra) বলা হয়। 


বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বিষয়:


 রশ্মি বিকিরণ অনুসারে বিভিন্ন পদার্থে কিছু লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্যের উদ্ভব হয়। যেমন:


প্রতিপ্রভা (fluorescence): 

আপতিত রশ্মি শোষণ করে উত্তেজিত পরমাণুর পদার্থ রশ্মির উৎস বন্ধ হয়ে। ও আবার ঐ শোষিত শক্তি দৃশ্যমান রশ্মি আকারে বিকিরণ করে। এরই নাম প্রতিপ্রভা।রশ্মির উৎস বন্ধ হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই রশ্মির বিকিরণও বন্ধ হয়ে যায়। অর্থাৎ খুবই ক্ষণস্থায়ী। Na, Hg ও এর বাষ্প, পেট্রোলিয়াম, কাঁচ প্রতিপ্রভা প্রদর্শন করে।

 

অনুপ্রভা (Phosphorescence):

রশ্মি শোষণ করার পর কোন পদার্থ কয়েক সেকেন্ড ধরে তা আবার বিকিরণ করলে এ বিষয়কে অনুপ্রভা বলে। মৃৎক্ষার ধাতুর সালফাইড (MgS) এ ধর্মের অধিকারী।


স্বতঃপ্রভা (Luminescence): 

কিছু কিছু পদার্থ আছে যেমন তেজস্ক্রিয় পদার্থ রেডিয়াম এবং ZnS-এর মিশ্রণ যা দিনের বেলায় সৌর আলো অথবা বৈদ্যুতিক বাতির আলো শোষণ করে এবং পরে আবার রাতের আঁধারে তা স্ফূের্তভাবে বিকিরণ করে তাকে স্বতঃপ্রভা পদার্থ এবং এ বিষয়কে স্বতঃপ্রভা বলে। অনেক ঘড়িতে এটি থাকে যার কারণে রাতের বেলা তা উজ্জ্বল দেখায় এবং সে আলোতে সঠিকভাবে সময় দেখা যায়।

-->